ফাতেমা জন্নাত পান্না,পেকুয়া প্রতিনিধি : কক্সবাজারের পেকুয়ায় মগনামার দৃষ্টিনন্দন জেটিঘাট প্রকৃতি প্রেমীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মগনামা জেটিঘাটে বসেই সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ্য হয়ে উঠছে দর্শনার্থীদের কাছে। তাছাড়া নদীর তীরে ঘাসের সবুজ বিছানা, ভিড়ে থাকা জেলেদের নৌকার বহর, সারি সারি বাঈন গাছ আর ঘাটের উভয় পাশে জেলেদের কর্মকাণ্ড দেখে আনন্দ পায় বলে জানান এখানে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসু লোকজন।
মগনামা ঘাটের ইজারাদার নুরুল ইসলাম জানান, ২০০ গজ দূরে সরু একটি দীর্ঘ সেতু দিয়ে মিলিত হয়েছে ঘাটের মূল পাঠাতনে। মূল পাটাতনের দৈর্ঘ্য ২০ গজ ও প্রস্থ ২০ গজ। পাটাতনের চারপাশে দেওয়া হয়েছে রেলিংয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী। তাছাড়া পাটাতনের উত্তর পশ্চিম কোণায় জেলা পরিষদ সম্প্রতি নির্মাণ করেছে একটি যাত্রীছাউনি ও গণশৌচাগার। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মগনামা ঘাটে আসা মানুষের নজর কাড়ে সমুদ্রজলে উৎপাদিত লবণ ও লবণ মাঠ। তাছাড়া ঘাটে নেমে চোখে পড়বে তীর ঘেঁষে ভিড়ে থাকা জেলেদের নৌকার বহর আর ঘাটের উভয় পাশে জেলেদের কর্মকাণ্ড।
জানা যায়, শত শত বছর আগে থেকে বসবাস করত রাখাইন নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। স্থানীয়ভাবে মগ নামেই বেশি পরিচিত ছিল সেই রাখাইনরা। মগেরা এই ঘাটে নেমে যাতায়াত করত বলে এর নামকরণ করা হয়েছিল মগনামা ঘাট। সেই থেকে এ এলাকায় মানুষের জীবন ও জীবিকাও চলে জোয়ার ভাটার নিয়মে।
সরজমিনে দেখা গেছে, ঘাটে দুপাশে নদীর তীরে ঘাসের সবুজ বিছানা, ভিড়ে থাকা জেলেদের নৌকার বহর, সারি সারি বাঈন গাছ। তাছাড়া ঘাটের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বসানো হয়েছে পাথরের ব্লক। এতে বিভিন্ন কালার করা হয়েছিল। দক্ষিণপাশে কাদাযুক্ত চরে স্থানীয় জেলেদের জীবনসংগ্রামের প্রতিক নৌকা রাখা হয়েছে, যা দেখে মানুষের মন নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। আর কিছু দক্ষিণে গেলেই দেশের একমাত্র সাবমেরিন ঘাঁটি। এই ঘাটির নাম বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটি। ঘাটের উত্তর পাশে রয়েছে বিনোদন ও পিকনিক স্পট।
সেবা সংগঠন এপেক্স ক্লাব অব পেকুয়ার সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, ছুটির দিন সপরিবারে মগনামা ঘাটে বেড়াতে এলাম। সমুদ্রের মাঝখানে বসে (ঘাটে বসে) জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখা বড়ই আনন্দের।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেন, ঘাটের সিঁড়িতে বসে জলের সঙ্গে মিতালী করা যায়। সন্ধ্যাবেলায় সূর্য ডোবার দৃশ্যটি অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দেয়। মনে হয় সাগরের ওই তীরে একটি ছোট গ্রামে সূর্যটি হারিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মুক্তার আহমেদ বলেন, দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা বিনোদনপ্রেমীদের মনোমুগ্ধকর করে তোলে দৃষ্টিনন্দন বানৌজা সংযোগ সড়ক, সড়কের একপাশে সাগর আরেক পাশে ঘরবাড়ি, সবুজের সমারোহ ধানের চাষ, লবণ চাষে ভরা সুন্দর পরিবেশ, কুতুবদিয়া চ্যানেলে জেগে ওঠা চরে ঘাসের সবুজ বিছানা ও মগনামায় উপজেলার প্রথম নান্দনিক ‘মগনামা গ্রিন’ পার্ক।
মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, সন্ধ্যা হলেই উপজেলা ও উপজেলার বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা এসে ভিড় জমায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মগনামা ঘাট হবে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার জনগণের একমাত্র বিনোদন স্পট।